
চাতুর্মাস: ঈশ্বরস্মরণের এক পবিত্র বিরতি
গুরুদেব অনন্ত শ্রী শ্রী সীতারামদাস ওঙ্কারনাথদেবের দৃষ্টিতে:
“যৎ তপ্যমানং তপসা ব্রহ্মচর্যেণ শ্রদ্ধয়া সংবৎসরং নিরাহারঃ শরীরং অনুবর্ততে, তদ্ যদ্ ব্রহ্ম বিদ্বান্ শুভে চাতুর্মাস্যে বসেত্।”
টেহরি / মুনি কি রেতি, ১লা মে:
প্রতি বছরের ন্যায়, এই বছরও উত্তরাখণ্ডের টেহরি গড়ওয়ালের মুনি কি রেতি, ঋষিকেশ আশ্রমে শ্রী গুরুচরণাশ্রিত কিনকর বাসুদেব মুখোপাধ্যায় (আচার্য) এর সান্নিধ্যে চাতুর্মাস মহোৎসব জাঁকজমকের সাথে পালিত হবে। এবারের চাতুর্মাসে আশ্রমে অখণ্ড নামকীর্তন ও পূজা-পাঠের আয়োজন হবে অত্যন্ত উৎসাহ ও ভক্তিভরে।
যখন আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায় এবং জগৎ অন্তর্মুখী হয়, তখন সনাতন ধর্মের ঋষিরা একে নিরাশা নয়, বরং এক দিভ্য আহ্বান বলে মনে করেন—ঈশ্বরের কোলের মধ্যে আত্মার পুনর্জীবনের সুযোগ। এই পবিত্র চাতুর্মাসের সময়, আমাদের পূজ্য গুরুদেব অনন্তশ্রী সীতারামদাস ওঙ্কারনাথদেব তাঁর অনবরত যাত্রা বন্ধ করে এক স্থানে অবস্থান করতেন এবং নাম, মৌনতা ও দিভ্য রচনায় লীন হয়ে যেতেন।
তিনি বলতেন—
“এখন স্থির হওয়ার সময়… যাতে নাম উদিত হতে পারে। এ ঈশ্বরের ঋতু।”
গুরুদেবের কাছে চাতুর্মাস ছিল একটি অন্তর্দর্শী উৎসব। তিনি বলতেন, এটি কোনো কৃত্য নয়, আত্মার এক জীবন্ত উৎসব। যখন ভগবান বিষ্ণু যোগনিদ্রায় থাকেন, আত্মাকে জাগরণের আহ্বান জানানো হয়। এই সময়ে তিনি আশ্রমে অবস্থান করতেন এবং মৌনতা, নাম-সঙ্কীর্তন, রচনা ও আধ্যাত্মিক শিক্ষায় ব্রতী হতেন।
গুরুদেবের চাতুর্মাসের মূল অঙ্গগুলি ছিল:
• শাস্ত্র ও স্বাধ্যায় – মৌনতায় দিভ্য গ্রন্থ রচনা
• সঙ্কীর্তন – দিনরাত মহামন্ত্রের ধ্বনি
• তপস্যা – সরল, সাত্ত্বিক জীবন ও ভোগবিলাসের পরিত্যাগ
• সৎসঙ্গ – যেখানে এক সাধারণ ঝাঁড়ুদারও মন্ত্রদীক্ষা পেতে পারত
এই চাতুর্মাস ছিল না বর্জনের, না সংকোচের—এ ছিল করুণার ধারা।
যেমন স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে:
“চাতুর্মাসস্য মাহাত্ম্যং শৃণু দেবি সনাতনম্…”
“হে দেবি, চাতুর্মাসের সনাতন মাহাত্ম্য শুনো; যিনি একে শ্রদ্ধা সহকারে পালন করেন, তিনি পরম ফল লাভ করেন।”
ঋষিকেশে এক জীবন্ত পরম্পরা
এই স্থানেই গুরুদেব গভীর তপস্যা করেছেন, দিভ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং অগণিত আত্মাকে মুক্তির পথে পরিচালিত করেছেন। এই ঋষিকেশ আশ্রম শুধুমাত্র একটি স্থান নয়, এটি ঠাকুরের শাশ্বত কর্মকাণ্ডের এক কেন্দ্র; যেখানে আজও শারদীয় ও বাসন্তী দুর্গাপূজা, মা অন্নপূর্ণা পূজা ইত্যাদি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় অনুষ্ঠিত হয়।
চাতুর্মাসের গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বিবেচনায়, ঋষিকেশ আশ্রমের সেবকগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আসন্ন গুরু পূর্ণিমা থেকে রাস পূর্ণিমা পর্যন্ত চাতুর্মাস উৎসব গুরুদেব অনন্ত শ্রী শ্রী সীতারামদাস ওঙ্কারনাথদেবের পরম্পরা অনুসারে পালিত হবে।
আমাদের উদ্দেশ্য—গুরুদেবের করুণায় পরিচালিত নামসঙ্কীর্তনের ধ্বনি ছড়িয়ে দেওয়া এবং এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেখানে সাধকরা প্রার্থনা, সঙ্কীর্তন, সৎসঙ্গ ও সেবায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। এই পবিত্র ঋতুতে আমরা সকলে একত্রিত হয়ে আমাদের গুরুদেবের পদচিহ্ন স্মরণ করব, ভক্তিতে নিমগ্ন হব এবং আমাদের হৃদয়কে প্রভুর চরণে সমর্পণ করব।
যোগাযোগ / অংশগ্রহণের জন্য:
• পণ্ডিত সনৎ চট্টোপাধ্যায় (আশ্রম পুরোহিত)
• পণ্ডিত চিরঞ্জীত বন্দ্যোপাধ্যায় (আশ্রম পুরোহিত)
• দিলীপ শর্মা
• মধু সরকার
• তপন সরকার
• লালটু দত্ত
• কঞ্চন কর্মকার